Recents in Beach

বরফ রানি:পর্ব ০১।Baraf Rani: part 01


 


 

বরফ রানি পর্ব: ০১।Baraf Rani part 01



মূল গল্প: হ্যান্স ক্রিশচিয়ান আন্দেরসন
অনুবাদ: নাসরীন মুস্তাফা

দৈত্যটা আজ খুব খুশি।খুশি হবেই বা না কেন।শত বছরের সাধনা যে আজ সফল হয়েছে।ও বানিয়ে ফেলেছে ওর সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ আয়না।
এই আয়না বানানোর জন্য ওর অনেক

 বছর সাধনা করতে হয়েছে। যদিও এর আগে অনেক খারাপ ধরনের আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু এই আবিষ্কার টা সম্পুর্ন আলাদা। এই আয়নার সামনে যে ই দাঁড়ায় তার ভিতরের খারাপ গুনগুলো তার নিজের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।নিজে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।

দৈত্যদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ছিল সে। সত্যি বলতে সেই ছিল প্রকৃতপক্ষে দৈত্য।


দৈত্যটার একটি ইসকুল ছিল। সেই ইসকুলে যত জ্ঞানী-গুণী ছিল, তারা আয়নাটা দেখে জানালো, আজব ঘটনা সত্যিই ঘটে গেছে। তারা আয়নাটা নিয়ে কত যে দৌড়ালো! পৃথিবীর কোনো দেশ বাকি ছিল না, যেখানে আয়নাটা যায়নি। কোনো মানুষও আর ছিল না, যে কি না এই উল্টোপাল্টা আয়নার মাঝে নিজেকে দেখেনি। জ্ঞানী-গুণীরা আয়নাটা নিয়ে স্বর্গেও যেতে চেয়েছিল। সেখানে দেবদূতদের সঙ্গে আয়নাটা নিয়ে বেশ মজা করা যেত। পারা গেল না। উড়তে উড়তে বেশি উঁচুতে যেই উড়ছিল, আয়নাটা তত বেশি ভেংচিওয়ালা হাসি দিচ্ছিল। ধরে রাখাটাই কষ্টের হয়ে গেল।

হাত ফসকে আয়নাটা পড়ে গেল। নেমে গেল পৃথিবীর বুকে। মাটিতে পড়েই গুঁড়িয়ে গেল। টুকরো টুকরো হয়ে গেল। হাজার টুকরো। লাখো টুকরো। কোটি টুকরো।



টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া আয়নাটার শক্তি কি কমে গেল তবে? মোটেও  না। এখন আগের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়ে গেল।
কোনো কোনো টুকরো বালির কণার চেয়ে বড় নয়, উড়ে বেড়ায় সারা দুনিয়ায়, ঢুকে যায় মানুষের চোখে, আর তারপর, তারপর কি যে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে! যাদের চোখে আয়নার টুকরো পড়েছে, তারা যা কিছু দেখে, তা মোটেও আসল নয়। তারা দেখে আসলের মিথ্যে রূপ, কিন্তু বুঝতে পারে না ফাঁকিটা। ভাবে, তারা সত্যিটাই দেখছে।

বুঝলে তবে? গোটা আয়নাটার যে ক্ষমতা ছিল, টুকরোগুলোর ক্ষমতাও ঠিক সে রকমই রয়ে গেল। কোনো কোনো মানুষ আয়নার টুকরো বুকের গভীরে পেয়েছিল। ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেল তখন। এই মানুষগুলোর হৃদয় বদলে গেল এক টুকরো বরফে। আয়নার কিছু টুকরো এখনো ঘুরছে দুনিয়া জুড়ে। সেগুলো নিয়ে কী ঘটল, তা এখন শুনবে তুমি।



খুদে এক ছেলে আর খুদে এক মেয়ে
কত কত শীতের রাতে পথে পথে উড়ে বেড়াত মেয়েটা! জানালায় দিত উঁকি। জানালার কাঁচে তখনি জমে যেত বরফ। বরফের সে নকশা কত যে সুন্দর! যেন সব ফুল!

এক বিরাট শহরে বাস করত দুই শিশু। খুদে এক ছেলে আর খুদে এক মেয়ে। ওরা খুব বন্ধু। ওদের বাবামায়েরা মুখোমুখি দু’টি চিলেকোঠার ঘরে বাস করত। দুই বাড়ির ঢালু ছাদের নিচেই খুদে জানালা, একটি করে। দুজনেরই বাবামায়েরা জানালার কার্নিশে বিশাল বাক্স রেখেছিল। এর ভেতরেই পাত্র রাখা হতো বেশ কয়েকটা। বেশ কিছু ঔষধি গাছ আর গোলাপ গাছ বেড়ে উঠছিল সেখানে।

খুদে সেই ছেলের নাম ছিল কেই।
খুদে সেই মেয়ের নাম ছিল গেরডা।

বাক্সগুলো মেঝে থেকে উঁচুতে রাখা। খুদে সেই ছেলে আর খুদে সেই মেয়ে গোলাপ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মজার মজার খেলা খেলত। কেবল মাত্র শীত কালে এসব থেমে যেত। জানালাগুলো ঢেকে যেত সাদা বরফে। ওরা তখন খেলত অন্য খেলা। চুলার ভেতর তামার তার ঢুকিয়ে গরম করত। গরম তার দিয়ে ঠাণ্ডা জানালার কাঁচে চাপ দিয়ে সুন্দর গোল গর্ত করল। দুই জানালায় দু’টি গর্ত। তখন একটি উজ্জ্বল চোখ এই গর্ত দিয়ে তাকাত আরেক জানালার দিকে। সেখানে যে গর্তটা, তার ভেতর দিয়ে তাকাত আরেকটি উজ্জ্বল চোখ।

সন্ধ্যায়, যখন খুদে কেই ছিল বাড়িতে, সব পোশাকও পরেনি, জানালার পাশে চেয়ার নিয়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াল এর উপর। জানালার খুদে গর্তের ফাঁকে চোখ রাখল। অল্প স্বল্প তুষার কণা ঝরছিল। বাক্সের কিনারায় তখনো কিছু তুষার কণা পড়েছিল। এর ভেতরে সবচেয়ে বড় যে তুষার কণাটি, সেটি ওর চোখের সামনেই বড় থেকে আরও বড় হতে থাকল।

বড় হতে হতে তুষার কণাটি কি হলো?

সেটি হয়ে গেল এক নারী। তার পরনে ফিনফিনে সাদা জামা, মনে হচ্ছে লাখো লাখো তারার কণা দিয়ে সাজানো। কী যে সুন্দর সেই নারী! কিন্তু তার পুরো শরীরটাই বরফ, ঝকঝকে চকমকে বরফ। এরপরও সে বেঁচে আছে। তার চোখ জোড়া জ্বলজ্বলে তারার মতো করে জ্বলছে। সেই চোখে যেন কোনো বিশ্রাম নেই। নেই কোন শান্তি।

বরফ নারী জানালার দিকে তাকাল। তারপর নেড়ে দিল হাত।

খুদে ছেলেটা যা ভয় পেল না! লাফিয়ে নেমে গেল চেয়ার থেকে। আর তখুনি তার মনে হলো, জানালার ও পাশে বিশাল এক পাখি বুঝি উড়ে গেল।

পরের দিনটা ছিল উজ্জ্বল আর তুষার ঘেরা। এরপর এলো বরফ গলে যাওয়ার সময়। এরপর এলো বসন্ত। সূর্য আলো ছড়াচ্ছে, সবুজ পাতাগুলো চোখে পড়তে শুরু করেছে, সোয়ালো পাখিরা শুরু করেছে বাসা বানানো, আর মানুষজন খুলে দিচ্ছে বাড়ির জানালা।

এর পরের এক দিন।

কেই আর গেরডা একটি বই দেখছিল এক সাথে। ছবির বই। পাখি আর পশুদের নিয়ে লেখা। ঘড়িতে তখন কেবল পাঁচটা বাজার ধ্বণি বাজলো, আর তখুনি কেই  কিনা বলে উঠল, ‘ওহ্! কী যেন আমার বুকের ভেতরে লেগেছে! আর কিছু একটা বিঁধেছে চোখে।’

এটা তো ছিল সেই আজব আয়নার খুব খুদে এক টুকরো। মনে আছে তো সেই ভয়ানক আয়নার কথা, যেখানে সব ভাল বা সেরা বস্তুর ছবি দেখা যায় ছোট আর তুচ্ছ, আর যেখানে বাজে সব কিছু দেখা যায় চকমকে, সব ভুল হয়ে ওঠে খুব স্পষ্ট।

বেচারা কেই! আয়নার টুকরো সোজা চলে গেছে ওর অন্তরে, আর ওর হৃদয়টা হয়ে গেছে এক থাল বরফ। ও আর কিছু টের পাচ্ছে না। কিন্তু ওটা রয়ে গেছে ওখানেই।

‘কেন কাঁদছ?’ ছেলেটা জানতে চায়। বলে, ‘কান্না তোমাকে কুৎসিত দেখাচ্ছে; আমার কিছু যায় আসে না। কী ভয়ানক!’ এরপর ছেলেটা হঠাৎ করে নিজেই কাঁদতে শুরু করল। বলল, ‘গোলাপের ভেতর একটা কেঁচো ছিল, আর ঐ গোলাপটা তো কেমন কুটিল দেখতে; আসলে গোলাপগুলো নোংরা, আর ওগুলো যে বাক্সে জন্মেছে সেগুলোও নোংরা বটে!’

ছেলেটা বাক্সে লাথি মারল। এতে গোলাপের দুটি পাত্র গেল ভেঙ্গে।

‘কেই, তুমি কী করছ?’ খুদে মেয়েটি চিৎকার করে উঠল। তখন ছেলেটি আরেকটি গোলাপের পাত্র ভেঙ্গে দিল।

সব সময়ের মতো দাদীমা যখন গল্প বলছিলেন, সব সময়ের মতো সে মনোযোগ দিল না, বরং- দাদীমার চেয়ারের পেছনে কেমন কেমন করে যেন চলে গেল, দাদীমার চশমাটা চোখে ঝুলিয়ে দাদীমাকে নকল করতে শুরু করল।

এই কাজটা সে এখন খুব ভাল পারে আর মানুষ তখন খুব হাসে। খুব শিগগিরি ছেলেটা পথের সবাইকে নকল করতে পেরে গেল। প্রত্যেকের ধরণ আর অনুভূতি নিয়ে মজা করতে পেরে গেল। লোকেরা বলতে লাগল, ‘ছোকরা তো খুব চালাক বনে যাচ্ছে।’

আসলে এ সব কিছুই ঘটছে ওর অন্তরে ঢুকে যাওয়া কাঁচের টুকরো আর চোখের উপর থাকা কাঁচের টুকরোটার জন্য। এ সবের জন্যই ও খুদে গেরডাকে নিয়ে তামাশা করতে পারত। অথচ গেরডা কত না কাছের ছিল ওর!

একটু পরেই কেই ওর পুরু হাতমোজা পরে পিঠে স্লেজ ঝুলিয়ে এলো। গেরডার কানের কাছে চেঁচিয়ে বলল, ‘বড় ময়দানটায় আমি যাচ্ছি ছেলেদের সাথে খেলতে!’

কেই চলে গেল এরপর।

বড় ময়দানটায় সাহসী ছেলেগুলো যার যার ছোট্ট স্লেজ খামারের মালবাহী গাড়ির সাথে বেঁধে দেয়। গাড়ি চলে আর ওরাও স্লেজে দাঁড়িয়ে চলে যায় অনেক দূর। এই মজার কোন শেষ নেই।

খেলার ঠিক মাঝ পথে বড়সড় একটা স্লেজ এলো। সাদা রঙ করা। এর মালিকের গায়ে সাদা পশমের কোট আর মাথায় টুপি। ময়দানটা দুইবার ঘুরল এটি। এর পেছনে কেই ওর স্লেজ বেঁধে নিয়েছিল জলদি। স্লেজটা চলছিল দ্রুত, আরও দ্রুত, আরও- পাশের রাস্তায় গেল চলে। চালক ঘুরে কেইয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিল, মনে হলো কেই তার চেনা কেউ। যতবার কেই সেই স্লেজটাকে হারাতে চাইছে, ততবার এর চালক ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। বেচারা কেই রয়ে গেছে যেখানে সে ছিল। শহরের তোরণের দিকে ছুটল ওরা।

তুষার পড়তে শুরু করল জোরেশোরে। খুদে ছেলেটা দেখতে পায়নি কিছু, কেউ তার সামনে হাত নেড়েছিল কি না। বাঁধন খুলে দিয়ে চাইল বড় স্লেজটাকে এড়িয়ে যেতে। কোন লাভ হলো না। ওর খুদে স্লেজটা ধাক্কা খেল প্রথমে, উড়ে গেল জোরে, বাতাসের চেয়েও জোরে। খুব জোরে চেঁচিয়ে উঠেছিল কেই। কিন্তু কেউ শোনেনি। তুষারের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল স্লেজটা। সব সময় এমন হলে লাফিয়ে যেতে হয়। ছেলেটা এত বেশি ভয় পেয়েছিল যে প্রার্থনা করতে চাইলেও পারেনি। কেবল মনে পড়েছিল নামতাগুলো।

তুষার কণাগুলো আরও বড় হচ্ছে। শেষ মেষ এগুলোকে ইয়া বড় সাদা মুরগীর মতো দেখাল। বড় স্লেজটা থামল। কেউ একজন নেমে এলো। কোট আর মাথার টুপি ছুড়ে ফেলে তুষারে। লম্বা, খটোমটো এক নারী সে, আপাদমস্তক সাদা। এ নারী আর কেউ নয়, বরফ রানী নিজেই।

বরফ রানী কেইকে স্লেজের ভেতর থেকে বের করল। নিজের পশমি গলাবন্ধ দিয়ে জড়িয়ে দিল ওকে। কেই তখন ভাবছিল, ও বুঝি বরফের নদীতে ডুবে যাচ্ছে। বরফ রানী কেই-এর কপালে চুমু খেলেন। আর তখনি কেই ভুলে গেল খুদে গেরদা’র সব কথা। দাদীমা আর বাড়ির সবাই যে ওর ছিল, তাদের কারোর কথা ওর আর মনে রইল না।

স্বর্গের চওড়া কিনারায় চোখ যায় কেই-এর। ওরা কেবলই উঠছিল। বরফ রানী ওর সাথে উড়ছিল বড় এক কাল মেঘের মতোই। বন-জঙ্গল আর হ্রদ পার হয়ে ওরা উড়ছিল। সাগর-মহাসাগর আর দ্বীপগুলোর উপর উড়ছিল। ঠাণ্ডা বাতাস ওদের নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল শীষ দিতে দিতে। নেকড়াটা মুখ উঁচিয়ে ডেকে ওঠে। কাল কাকগুলো ঝগড়াটে চড়–ইদের তাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু সবচে উপরে দেখা দেয় চাঁদটা, যেমন উজ্জ্বল, তেমনি ঝকঝকে। কেই তখন তাকায় চাঁদের দিকে। পুরো পথ জুড়ে, শীতের লম্বা রাত জুড়ে ও তাকিয়ে দেখে চাঁদকে। কেবল দিনে ও ঘুমায় বরফ রানীর পায়ের উপর।

বাগানে জাদু শেখা বুড়ি
তখন এক বুড়ি, থুরথুরে বুড়ি বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে; বিশাল এক বাঁকানো মাথার লাঠিতে ভর দিয়ে ছিল সে। মাথায় ছিল বিশাল এক রোদ ঠেকানো টুপি, যা সুন্দর ফুলের নকশায় ঢাকা পুরোটা।

কেউ জানে না, কেউ জানে না কেই-এর কি হয়েছে। অবশেষে, সবাই ধরে নিল কেই মরে গেছে। হয়তো কেই পড়ে গেছে শহরের কাছ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে। ওহ্, কী লম্বা, কালো শীতের দিনই না ছিল!

অবশেষে এলো বসন্ত। সূর্যটা উঠল হেসে।
‘কেই মরে গেছে, তাই চলে গেছে,’ বলল খুদে গেরডা।
‘আমি বিশ্বাস করি না,’ বলল সূর্যের আলো।
‘কেই মরে গেছে, তাই চলে গেছে,’ সোয়ালো পাখিদের বলল মেয়েটা।
‘আমরা বিশ্বাস করি না এ খবর।’ সোয়ালোরাও যখন এ কথা বলল, তখন গেরডাও আর বিশ্বাস করল না সে কথা।
এক সকালে মেয়েটা বলল, ‘আমার নতুন লাল জুতোটা পায়ে গলিয়ে নিচে নেমে যাব নদীর কাছে। কেই জুতো জোড়া কখনোই দেখেনি। আমি নদীর কাছে জানতে চাইব কেই-এর কথা।’

খুব সকালের কথা এসব। বুড়ো দাদীমা তখনো ঘুমচ্ছেন। তাকে চুমু খেয়ে লাল জুতো জোড়া পায়ে গলিয়ে একলা একা বেরিয়ে এলো গেরডা। তোরণ পার হয়ে চলল নদীর দিকে।

‘এটা কি সত্য যে তুমি আমার খুদে খেলার সাথিকে নিয়ে গেছ? আবার তাকে ফিরিয়ে দাও, তাহলে এই জুতো জোড়া তোমাকে দিয়ে দেব, নদী।’
নদীর বুকে খুদে ঢেউ কেমন করে যে জেগে উঠল! গেরডা লাল জুতো জোড়া খুলে নেয়। কত সাধের জুতো জোড়া ওর! সোজা পানিতে ছুঁড়ে মারে সেগুলো। তীরের কাছাকাছি ডুবে গেল বটে, একটু পরেই খুদে ঢেউ আবার ফিরিয়ে দিল ওগুলো। মনে হ’ল, নদী ওর উপহার নেয়নি। মনে হ’ল, খুদে কেই-এর কী হয়েছে, তা জানে না নদী।

Post a Comment

0 Comments