কাজলরেখা পর্ব-০৬। Kajalrekha part-06


রাজকুমারের প্রিয় ঘোড়া রকস পিঠে বসে আছে রাজকুমার।তার ঠিক পিছনে বসে আছে বিক্রম। বিক্রমের বেশ ভুসা তেমন ভালো না হলেও দেখতে কেউ কারো থেকে কম নয়। রাজকুমার রাজ পোষাকের কারনে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। কিন্তু বিক্রমের সৌন্দর্যের কারনে মনে হচ্ছে ওর পোষাক কে সুন্দর লাগছে। পোশাক টাকে ওর গায়ে খুব ই বেমানান লাগছিল। ওদের ঠিক উপরেই উঠে যাচ্ছিল হিরামন।

 হঠাৎ কি মনে করে হিরামন সাঁই সাঁই করে উড়ে চলে গেল ওদের ছেড়ে রাজমহলের উদ্দেশ্যে। ওরা রয়ে গেল পিছনে। ওরা টগবগিয়ে চলছে না। অনেকটা ধীরগতিতে চলছে ওদের ঘোড়া রকস।কারন প্রায় তিন দিন যাবৎ সে তেমন খাওয়া দাওয়া করেনি। রাতেও তেমন খেতে পারেনি রকস। 


এদিকে উড়ে উড়ে রাজমহলে আসতে তার বেশি সময় লাগে নি। রাজমহলে ততক্ষণে হৈচৈ পড়ে গেছে। আগেই বলেছি হিরামন অনেক বিচক্ষণ পাখি।সোজা গিয়ে বসল রাজার পাশের জানালার কাছে যাতে ও কোন সমস্যায় না পড়ে। এসেই তার আদো আদো মুখে রাজার জয়ধ্বনি করতে লাগলো। 


: জয়,রাজা সুবির সেনের জয়।

: জয় রাজা সুবির সেনের জয়।


সবাই শিশুদের মত একটা কন্ঠে এমন জয়ধ্বনি শোনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না। হকচকিয়ে গেল সবাই। 


: রাজামশাই জানালার দিকে তাকিয়ে দেখেন।


মিষ্টি গলায় বলল হিরামন। রাজা ও তাকালো। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না।একটা পাখি কথা বলতে পারে,এটা রাজার বিশ্বাস হচ্ছিল না।


: চমকে যাওয়ার কোন কারণ নেই। আমি হিরামন আর আমি আর আমার বন্ধু আপনার রাজপুত্রের প্রান বাঁচিয়েছি। আর হ্যাঁ আমি সাধারনত কোন পাখি ন‌ই হয়তো বুঝতে পারছেন।


ধীরে ধীরেই কথাগুলো বললো হিরা,,। এতক্ষণ পুরো সভাসদ নিরব ছিল। রাজামশাই নিজেই কিছু বলছিলেন না।


: রাজামশাই ভাবার কিছু নেই। আপনার কুমারের সাথে যে আসছে তাকে আগলে রাখবেন। সে কিন্তু সাধারণ কেউ নয়।


কথাটা বলেই জানালা দিয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল হিরামন। রাজামশাই এতক্ষণ যেন কোন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। ও চলে যাওয়ার পর মনে হলো ঘোরটা কাটল। রাজসভার নিরবতা কাটাল সয়ং রাজা সুবির সেন।


: রাজকুমার এবং তার নতুন সঙ্গীকে তাড়াতাড়ি রাজ নিয়মে বরন করার আয়োজন করা হোক। রাজ নিয়মের বাইরে যেন কোন কিছু করা না হয়।


কথাগুলো তার নিজের নিয়মেই বলল।তার কথা বলার নিজস্ব একটা নিয়ম আছে।সে যখন কথা বলবে তার মুখের দিকে কেউ তাকাতে পারবে না। রাজামশাই সবার চেহারার দিকে তাকিয়ে সবসময় কথা বলে। এটাই ওনার অভ্যাস। 


কিছুক্ষনের মধ্যে চলে এল রাজকুমার এবং বিক্রম। রাজপরিবারের নিয়ম মেনেই ওদের দুজনকে বরন করে নেয়া হল। সয়ং রাজা নিজেই এসে সাদরে গ্রহণ করলো। রাজা নিজেই বিক্রেম সামনে মাথা নত করে অনুগত হল। এহেন আচরণে বিক্রম হতবাক হয়ে গেল। এতবড় সাম্রাজ্যের রাজা কিনা তার সামনে মাথা নত করলো। একাই নাকি এখানকার নিয়ম। কখনো যদি কেউ রাজপরিবারের কোন সদস্যের প্রান বাচায় তার সামনে এভাবেই রাজাকে অনুগত স্বিকার করতে হবে।

 রাজকুমারকে তাড়াতাড়ি অন্দরমহলে নিয়ে যাওয়া হলো। 

বিক্রমকে স্বয়ং সেনাপতি নিয়ে গেলেন অতিথিদের কক্ষে। কিন্তু পরক্ষনেই আদেশ এলো যেন বিক্রমকে রাজকুমারের পাশের কক্ষে রাখা হয়। রাজার হুকুম অনুসারে তাই করা হল। ততক্ষণে বিকাল হয়ে যাওয়ার কারণে রাজসভার কার্যক্রম বন্ধ করে রাজা চলে গেলেন তার আদরের ছেলের সাথে দেখা করতে। রাজা হলেও বাবা হিসেবে তার নিজস্ব একটা কেয়ার দরকার।


(আমি নতুন লিখছি,,তাই হয়তো গল্পটা বোরিং লাগতে পারে।আর একটা জিনিস হল কমেন্ট কিংবা লাইক কম হ‌ওয়াতে আমার এটা মনে হচ্ছে যে হয়তো সবার ভালো লাগছে না।তাই গল্প লেখার ইচ্ছেটা দিন দিন কমছে..)


মা এবং বাবার কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলল রাজকুমার।বাবা মাকে কাছে পেয়ে বিক্রমকে একদম‌ই ভুলে যায়নি। তাড়াতাড়ি একজন দাশকে আদেশ দিল বিক্রমের দেখাশোনা করার জন্য।


নতুন এবং রাজকীয় একটা জায়গায় যখন কোন গ্রাম্য অশিক্ষিত মানুষ যেমন অনুভব করে বিক্রম ঠিক তেমনটাই অনুভব করলো। হিরামনকে কোথাও দেখতে পেল না। সত্যি বলতে অল্প সময়ের মধ্যে হিরামনের প্রতি ওর খুব মায়া জন্মে গিয়েছে। এতক্ষণ বিক্রম বিছানায় বসতে লজ্জা লাগছিল তাই মেজেতেই বসে ছিল। হঠাৎ রুমে সিপাহি প্রবেশ করাতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।


সিপাহি রুমে এসে বিক্রমকে কুর্নিশ করল। তারপর ওকে নিয়ে স্নান করাতে নিয়ে গেল। স্নান শেষে বিক্রমকে আবার কক্ষে নিয়ে আসা হলো। বিক্রমকে দেয়া হল নতুন পোশাক। তারপর নিয়ে গেল রাজমহলের ভিতরে রানির মহলে।সেখানেই রাজপরিবার খাবার খায়। ততক্ষণে হিরামন‌ও এসে গেছে।

খাবার খেতে খেতে রাজা এবং রানি বিক্রমের সাথে অনেক কথা বলল।


বিক্রমকে রানিমা নিজের ছেলের জায়গায় স্থান দিল।এবং রাজা ঘোষনা দিল বিক্রম‌ই দ্বিতীয় রাজকুমার। বিক্রমের জন্য অস্ত্রচালনা শেখার ব্যবস্থা করা হলো। ব্যবস্থা করা হলো লেখাপড়ার।হিরামন মিশে গেল সবার সাথে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। হিরামনের দেয়া বিভিন্ন ভবিষ্যতদ্বানি সত্য হ‌ওয়াতে হিরামনের উপর আস্থা জন্মালো রাজা সুবির সেনের।


সবমিলিয়ে ভালোই চলছিল বিক্রমের দিন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিক্রম খুব‌ই পরাক্রমশালী যোদ্ধা হয়ে উঠল। রাজকুমার‌ও তাকে অনেক আপন করে নিয়েছিল। নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল রাজ পরিবারের সাথে। কিছুদিনের মধ্যেই বিক্রম থেকে হয়ে গেল বিক্রম সেন।তার হাটা চলা, কথাবার্তা, চালচলন সবকিছু রাজকীয় হয়ে উঠলো। ফুল যেমন বাগানে সুন্দর,,,পাখিরা যেমন বনে সুন্দর বিক্রম ও তেমন রাজকীয় পোশাকেই মানানসই।


রাজ্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জটিল সমস্যার সমাধান করে রাজা সুবির সেনের মনে জায়গা করে নিয়েছিল অল্প কিছুদিনেই হিরামন। বিক্রম‌ও দিনে দিনে দক্ষতা অর্জন করতে লাগলো। এভাবেই কেটে গেল দু বছর। রাজা প্রায় বার্ধক্যে পৌছুল। রাজকুমার পরমা সুন্দরী এক নারিকে বিয়ে করেছে এক বছর আগেই। তাদের কোলজুড়ে ফুটফুটে একটা ছেলেও হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজপরিবারে কোন ধরনের অশান্তি ছিল না। রাজ পরিবারে তখন চলছিল বিক্রম সেনের বিয়ে নিয়ে কথা। বিক্রমের বিয়ে হয়ে গেলেই রাজা নতুন রাজা হিসেবে রাজকুমার বীর সিংহকে রাজা ঘোষনা করবেন। বিক্রমকে বানানো হবে তার নতুন সেনাপতি।তার হুকুমে রাজ্যের সবাই খুশি ছিল। রাজ্যের মানুষ রাজাকে খুব‌ই ভালোবাসতো।


সবমিলিয়ে ভালোই দিন যাচ্ছিল সুন্দরগড় রাজ্যের মানুষের। হঠাৎই নীল আকাশটা ছেয়ে গেল কালো মেঘে। রাজামশাইয়ের সুন্দর মুখটার ফুটে উঠল চিন্তার ছাপ। রাজ্যের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্ক। সবার মুখে একটাই কথা এবার কি হবে। কে বাঁচাবে এই সুন্দর রাজ্যটাকে।

 সেদিন রাজা তার দুই রাজপুত্রকে সভায় ডাকলেন। রাজ্যের সভাসদরা অধিকাংশ বয়স্ক। মলিন মুখে রাজা সবার উদ্দেশ্যে একটা ভাসন দিলেন।


: নতুন করে বলার মতো কিছুই নেই। তোমরা সবাই জানো কি হতে চলেছে আগামী দিনে। আমাদের হাতে মোটেও সময় নেই। আমাদের অতিশিগ্র‌ই প্রস্তুতি নিতে হবে।

সেনাপতি, আমাদের সেনা প্রস্তুত করেন অতিদ্রুত।


কিছুক্ষণ থেমে আবার বলতে শুরু করলেন,,,


: আমাদের সৈন্য অনেক কম।তাই আমাদের যুবকদের যুদ্ধের জন্য তৈরি করতে হবে।এই দায়িত্ব আমি আমার আগত রাজা এবং তার আগত সেনাপতি বীর সিংহ এবং বিক্রম সেনের উপর দিবো। কেননা তোমাদের রাজ্য পরিচালনা করার সময় এসে গেছে।


রাজা নিজের কথা শেষ করে সবাইকে কাজে লেগে যেতে বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্যজুড়ে ঘোষনা করা হলো দেশে আগত বিপদ এবং তার জন্য দেয়া মহারাজের আদেশ।


প্রায় বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে পুর্বদেশ বিজয়গড়ের রাজা থেনিশ সুন্দরগড় আক্রমন করতে ধেয়ে আসছে।এর আগে বিভিন্ন দেশ তারা বিজয় করে ফেলেছে। এর‌ই মধ্যে শুনতে পেরেছে সুন্দরগড়ের রাজার খুব বয়স হয়েছে এবং এখানকার সৈনসামন্ত দুর্বল।তাইতো গহীন জঙ্গল অরুনের বন ভেদ করে চলে এসেছে এই অঞ্চল দখল করতে।


ত্রেপান্তরের মাঠে ঘাঁটি বেঁধেছে হিংস্র রাজা থেনিশ ও তার তিন পুত্র ডেবিল,স্মিথ এবং মেরুন।তিনটা ছেলেই বাবার মতো হিংস্র,,নির্দয়।দশ দিনের। সময় দিয়ে সুন্দরগড়ে চিরকুট দিয়েছিল থেনিশ।তারপর‌ই আক্রমন করবে তারা।


এদিকে রাজকুমার বীর সিংহ এবং বিক্রম সেনের তত্ত্বাবধায়নে অনেক সৈনের জোগাড় হলো। রাজা সুবির সেন সাহায্যের আবেদন করে চিঠি লিখলেন মিত্ররাজ্যের কাছে। কিন্তু কোন উত্তর পেলেন না তিনি।


দিন দিন চিন্তা আর আর হতাসায় ভেঙে পড়তে লাগলেন রাজা সুবির সেন।গভীর রাতে উঠে প্রচুর কান্নাকাটি করতে থাকেন তিনি। খাওয়া দাওয়া কমে যেতে থাকে তার।


দেখতে দেখতে সাতদিন কেটে গেল।রাজ্যের কারো চোখেই ঘুম নেই।সাতদিনে প্রায় ১২ লক্ষ সৈন্যের জোগাড় করতে পারল সুন্দরগড় রাজ্য।এই সৈন্য থেনিশের সৈন্যের সামনে কিছুই না।কারন তারা সবাই পরিপক্ক এবং দক্ষ।


আটদিনের দিন র‌ওনা দিতে হলো সবাইকে।১২ টি দশ গঠন করা হলো সর্বমোট। 

১২টি দলের মধ্যে একটি দলের সেনাপতি বিক্রম। বিক্রম যুদ্ধবিদ্যায় খুব‌ই পারদর্শী হয়ে উঠেছিল।তার সামনে যুদ্ধ করার মত দ্বিতীয় বীর সুন্দরগড়ে ছিল না।


ত্রেপান্তরের মাঠের কিছুটা দূরে তাবু ফেললো সুন্দরগড়ের সৈন্যদল। সেদিন যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। 


১২ সেনাপতিকে সন্ধ্যা হতেই ডেকে পাঠালেন নিজের তাঁবুতে। ছোট্ট একটা কান্নাজড়িত ভাষন দিলে রাজা। এই কয়দিনে রাজা অনেক শুকিয়ে গেছে।কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন।

সভাশেষে এই সিদ্ধান্তে এল যে রাজপুত্র এবং রাজা কেউই প্রথমদিন যুদ্ধে যাবে না।এবং এদের সৈন্যদল‌ও রাজা এব‍ং রাজপুত্রকে পাহারা দিবে। 


বিচক্ষণ হিরামনও একদম বসে নেই। কাউকে কিছু না বলে উড়ে চলে গেল শত্রুশিবিরে। থেনিশের তাবু চিনতে মোটেও কষ্ট হয়নি হিরামনের। পৌঁছে গেল একদম তাঁবুর ভীতরে এক কোণে।

 চারটি প্রানি গোল হয়ে বসে যুদ্ধের বিষয়েই আলাপ করছে। থেনিশ ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বলল,,


: আমরা আমাদের নিয়ম মেনেই যুদ্ধ করবো।তোমরা কেউ‌ই যুদ্ধে যাবে না সকালে।আমাদের সেনাপতিরা সামনে থেকে যুদ্ধ করবে।তোমরা থাকবে সাধারণ বেশে। তোমরা ঠিক দুপুরবেলা ঝাঁপিয়ে পড়বে ক্লান্ত সৈন্যদের উপর। কিছু সময়ের জন্য যাবে কচুকাটা করে ফিরে আসবে।তবে রাজা কিংবা রাজপুত্রকে সামনে পেলে একদম‌ই ছাড়বে না।


চুপ করে কথাগুলো লুফে নিচ্ছিল হিরামন।এসব তথ্য সুন্দরগড়ের জন্য খুবই দরকারি।


: কিন্তু বাবা আমাদের সৈন্যরা ঘোড়া ছাড়া যুদ্ধ করতে পারে না।আর আমার মনে হয় আমাদের আরো ঘোড়ার প্রয়োজন।


কথার মাঝেই ডেবিড কথা বলে উঠলো।


: আমি যুদ্দক্ষেত্রে যাইনা তোমরা যানো। আমি কিন্তু সৈন্য নিয়ে নিজ দেশ থেকে নিয়ে আসব।


তার কথায় বাকি তিনজন শায় দিল।ওদের কথাবার্তা একটু পরেই শেষ হয়ে গেল।হিরামন পাখা মেলল।নীল আকাশে।


বিক্রম তখোনো ঘুমায়নি।হিরামনের অপেক্ষায় ছিল সে।এর‌ই মধ্যে হিরামন এসে পড়ল।


: কিরে কোথায় ছিলে এতক্ষণ?


নরম কন্ঠেই জিজ্ঞেস করল বিক্রম।


: আমি শত্রুশিবির থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে এসেছি। আমার মনে হয় তোমার মহারাজের সাথে কথা বলা দরকার।


,ইরানের প্রতি বিক্রমের যথেষ্ট বিশ্বাস ছিল।তাই সে মহারাজের তাঁবুর উদ্দেশ্যে র‌ওনা দিল।সাথে করে রাজকুমার বীরসিংহ কে সাথে নিয়ে গেল।

রাজা তখনো ঘুমান। ঘুম আসার‌ও কথা নয়।রাজ্যের বিপদের দিনে একজন সৎ রাজা কখনো চিন্তামুক্ত থাকতে পারে না। অনুমতি নিয়ে ভীতরে প্রবেশ করল ওরা ।


: বাবা হিরামন শত্রুশিবির থেকে এল এইমাত্র।ও আপনাকে কিছু বলতে চায়।


নিরব গলায় বিক্রম যেন পুঁথি পাঠ করলে।


: নিশ্চ‌ই কোন জরুরী সংবাদ বলবে তুমি।দেরি করো না বলো।

(অনুরোধের সুরে বলল)

হিরামন ঠিক তেমনটাই বলল যেমনটা ও শুনেছে।রাজা অনেকটা খুশি হলো। বিক্রমের উপর ভার দেয়া হল যাতে সে থেনিশের ছেলেদের কন্ট্রোল করতে পারে।

রাতে বিক্রমকে আরো একটা বুদ্ধি দিল হিরামন।


সকাল বেলাই যুদ্ধের ঘন্টা বেজে গেছে।তখন শীতকাল তবুও সবাই সকাল সকাল উঠে পড়ল। ১২ সেনাপতিকে নিয়ে আরো একটা ছোট সভা হয়ে গেল ।সভায় বলা হলো তারা প্রতেকে যেন নিজ নিজ দলের সৈন্যদের এটা জানিয়ে দেয় যে শত্রুকে আঘাত করার আগে তার বাহনকে আঘাত করতে। ছোট্ট মিটিং শেষেই সবাই সবার সৈন্যদের তৈরি হতে বলল‌।


হাতে ভাল তরবারি গায়ে তারের গেঞ্জি।সবাই সুসজ্জিত।একটু পরেই সবাই নেমে পড়বে রক্তের হোলি খেলায়।মাটি সিক্ত হয়ে উঠবে রক্তে। একটু পরেই শোন যাবে কারো আর্তনাদ,কারো হাহাকার,বাঁচার জন্য একটু অনুপ্রেরণার,ঘোড়ার হৃষা ধ্বনি।এই আকাশ বাতাস যেন লাল রক্তের ঘ্রান নিতে চায়।


প্রতিটি দল সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে।সবার উদ্দেশ্যে তাদের সেনাপতি কিছু ভাষন দিচ্ছে। সবগুলো দলে এক‌ই সংখক লোক থাকলেও সেনাপতি বিক্রম সেনের সৈন্য তাদের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু কারন জানার মতো সময় কারো কাছে নেই।তাই কেউই জিঙ্গাসা করল না বাকি সৈন্যরা কোথায়।


হঠাৎ করেই বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা ‌। শত্রুপক্ষে ঘোড়া স‌ওয়ার হয়ে ছোটা শুরু করে দিয়েছে।এদিকেও বেজে উঠল দামামা।রক্তের নেশায় ছুটে আশা হায়নাদের পথ রোধ করতেই যেন এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরগড়ের সৎ মানুষগুলো।


মুহুর্তের মধ্যে শুরু হয়ে গেল চিৎকার চেঁচামেচি।তরবারির ঝংকার,জানিয়ে দিল ত্রেপান্তরের ধূলা রক্তের স্বাধ নিচ্ছে।ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় সমান তালে চলল যুদ্ধ। কখনো পিছিয়ে যায় শত্রুপক্ষ কখনো সাজাতে হয় তাদের।


দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেল।যাদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে ছিল বিক্রম শেষে দেখা মিললো।

ঝাকড়া চুল, মুখে হালকা দাড়ি,গায়ের রং কালো।ঘোড়াটা যেমন টগবগিয়ে ছুটছে সমান তালে কচুকাটা করছে সুন্দরগড়ের সৈন্যদের।

বিক্রম দেরি করলো না।তড়িৎগতিতে সামনে গিয়ে দাড়াল লালচক্ষু ওয়ালা লোকটার।এবার যোদ্ধা যেষ উপযুক্ত কাউকে পেল। শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ।ঝংকারে ঝংকারে মেতে উঠলো হিংস্র পরিবেশটা। বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ করল দুজন। কিন্তু কেউই হারল না।বিক্রম নিজেই ভুলে গেল লেরিক্স। তুমুল যুদ্ধ তখন‌ও চলছে,,, হঠাৎ শুরু হলো তীরবৃষ্টি।

কিন্তু কোন তীর সুন্দরগড়ের কাউকে ছুয়েও দেখল না।পিছু হটতে বাধ্য হলো থেনিশের সৈন্যরা।


বিক্রম ডেবিড যুদ্ধ তখনো চলছিল। হঠাৎ একটা তীরবিদ্ধ সৈন্য ডেবিডের শরীরে ধাক্কা খেল।তার ফলে সে ঘোড়া থেকে নিচে পড়ে গেল।তার‌ই ঘোড়া ভয়ে নাকি ঘৃনায় জানানা তার গায়ে উঠে গেল।ছিটকে পড়ল তলোয়ার।খঞ্জনি কিংবা ঢাল কিছুই বাকি র‌ইল না তার হাতে। ঘোড়াগুলো ছোটাছুটি করছিল,কবে এটাই স্বাভাবিক। ঘোড়ার খুরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে ডেবিড।বিক্রমের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। একজন সাধারণ সৈন্য তার তলোয়ার দিয়ে ডেবিডের প্রানপাখিটাকে মুক্ত করে দিল।


অনেক সৈন্য মারা গেল।তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিজয়গড়ের। অনেক সৈন্য মারা গেছে।সাথে ছেলে হারিয়েছে থেনিশ।ছেলের শোকে আরো কঠোর হৃদয় হল তার। নিজের রাগ মেটাতে নিজের‌ই দশ সৈন্যকে জবাই করে দিল থেনিশ।


এদিকে সুন্দরগড়ের সৈন্যদের অনেকের মুখেই হাসি।কারন তাদের,,,,