কাজলরেখা পর্ব-০৫। Kajalrekha part-05


এদের কথাবার্তা কিছুই মিথায় ডুকছে না। মাথা চুলকাতে চুলকাতে হিরামনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে। ঠিক তখনই হিরামন উড়ে গেল ওখান থেকে।

সকালের নাস্তায় শুধু কিছু ফল পেল যেগুলো হিরামন আর রুপামন জঙ্গল থেকে তুলে এনেছে। খুব মজাদার ফল। বৃদ্ধ লোকটা খাবার খেল কিন্তু খুবই কম। 


খাবার খেয়ে আবার জানতে চাইল বিক্রম। কেন তাকে এখানে চারদিন থাকতে হবে। কেন সে এখান থেকে এখনি মেতে পারবে না। আর রাজা বিক্রম সেন,,এই কথার মানে কি।

বেশ কয়েকবার জিঙ্গাসা করার কারণে প্রচন্ড রেগে গেল বৃদ্ধ লোকটা। রাগে ফুঁসতে লাগলেন তিনি। হিরামম-রুপামন ভয়ে চুপসে গেল। বিক্রম‌ও খানিকটা ভয় পেল।

প্রচন্ড রাগের কারনে চেহারা টকটকে লাল হয়ে গেল। মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে কুটিরের বাইরে এলেন। ছোট্ট উঠানের চারপাশে ফোঁটা ফুলগুলো নিমিষেই শুকিয়ে গেল। হিরামন ওনাকে থামানোর চেষ্টা করলেন। সাথে সাথে হাতের ইশারায় হিরামনের গায়ে গিয়ে একটা আলোকরশ্মি পড়লো। পাখিটা সাথে সাথে নিচে পড়ে গেল নরম ঘাসের উপর।


এই পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকা ভালো বিক্রম সেটা বুঝতে পারলো। পাখিটাকে মাটি থেকে তুলে ঘরে নিয়ে এল। নরম বিছানা করে আলতো করে শুইয়ে দিল। মাথায় হালকা পানি দিয়ে দিল। কিন্তু অঙ্গান পাখিটার ঙ্গান ফিরল না। বাকরুদ্ধ হয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ যাবত বিক্রম। বুঝতে পারেনি গুরুজি এতটা রেগে যাবে। 


তড়িগড়ি করে ঘরে ঢুকল গুরুজি।


"বিক্রম, এই হিরামনকে নিয়ে এই মুহূর্তে আমার আলয় ত্যাগ করো।এটা আমার আদেশ"


"কিন্তু গুরুজি ওর তো ঙ্গান ই ফিরছে না।আর আমি এখন কোথায় যাবো। আমি তো কিছুই চিনি না"


" চুপ করো!! আর একটা কথাও বলবে না"

অনেকটা জোরেই ধমক দিয়ে বললো গুরুজি।


"তা না হলে তোমার অবস্থাও এই মুর্খ পাখির মতো হবে।যাও এখান থেকে"


বিক্রম আর কি করবে‌। গুরুজির কথামতো অসুস্থ পাখিটাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু কোথায় যাবে। এখানে কোন কিছুই যে ওর চেনা নয়। তাই ঠিক করল আপাতত নদীর তীরে যাওয়া যাক। এখানে শুধু এটাই ওর চেনা যায়গা। তাছাড়া একবার ঘন জঙ্গলে হারিয়ে গেলে আর লোকালয় ফেরা হবে না। 


ততক্ষণে দুপুর হয়ে গেছে। এদিকে হিরামনের হুস আসার কোন নাম নেই। নদীর পাড়ে গিয়ে আরেকবার ওর মাথায় পানি দিয়ে দিল। গাছের ছায়ায় ওর পাশে পাখিটা রেখে নিজেও বসে পড়ল সেই গাছের তলে। চোখে কিছুটা ঘুম ঘুম এল। কিন্তু ঘুমালে যে বিপদ হতে পারে। এই পাখিটাই এখন তার একমাত্র বাচার উপায়। তা না হলে বেঘরে প্রান হারাতে হবে তার।


সুর্য অনেকটা পাটে নেমে এল। পাখিটা নড়াচড়া শুরু করেছে। বিক্রমের মুখে হাসি ফুটে উঠল। শেষমেষ হুস ফিরে এল হিরামনের। হুস ফেরার কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে গেল হিরামন।এটা ওদের একটা বিশেষ ক্ষমতা। এতক্ষণ বেহুঁশ থাকার পরে একটু সময়ের মধ্যে সমস্ত জরাজীর্ণ কাটিয়ে স্বাভাবিক হ‌ওয়া সব প্রানির পক্ষে সম্ভব নয়।


"কি হয়েছিল আমার বিক্রম" 


আদো আদো ভাষায় জিঙ্গেস করল হিরামন।


: আমি আমার অতিত কিছুই মনে করতে পারছি না। শুধু এটুকু মনে আছে তুমি এই সম্রাজ্যের আগত রাজা"


: রাজা বিক্রম সেন।


আবারো দরদমাখা কন্ঠে কথাগুলো বললো হিরামন


হিরামনের কাছে সবকিছু খুলে বলল বিক্রম।এটাও বলল যে ওখানে যেন আমরা আর না যাই। হিরামন ছিল খুবই বিচক্ষণ পাখি।ওর আশ্চর্য কিছু ক্ষমতা ছিল তা সয়ং ওর গুরুজিও জানতো না।আর ওর এইসব ক্ষমতা ও খুব কম ব্যবহার করতো। সবসময় সাধারণ হয়ে থাকার চেষ্টা করতো আর সেভাবেই থাকতো।


: তাহলে চলো সেইখানে সেখানেও তোমার যাওয়াটা জরুরি। আর আমাকে তোমার আপন করে নেয়ার সময় এসে গেছে। তোমাকে বলা গুরুজির সব কথাই সত্য। তোমার একটা কঠিন পথ পাড়ি দিতেই হবে।এটাই তোমার নিয়তি।


নিমিষেই হিরামন যেন ঙ্গানের সম্রাগি হয়ে উঠলো। তাকে বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছিল বিক্রমের।


: তোমাকে একটা কথা বলি বিক্রম। কখন বেশি প্রশ্ন করবা না। তাহলে খুব পস্তাতে হবে। খুব সাবধান।


হিরামন বললো সুরেলা কণ্ঠে। বিক্রম মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক করলো। যেন মায়ের আদেশ মেনে নেয়া ছোট্ট বালকটি।


কথা বেশি না বাড়িয়ে হিরামন র‌ওনা দিতে বলল। বিক্রম ও চলতে লাগল ওর পিছু পিছু.....


নতুন পথে যাত্রা~>`)~~~~>`)~~


# প্রথমত একটু কষ্ট হচ্ছিল বিক্রমের পথ চলতে। লতাপাতা গাছ গুলোকে এমনভাবে জড়িয়ে রেখেছে যে যাওয়ার মতো কোনো উপায় নেই। বিক্রমের বার বার মনে প্রশ্ন জাগছিল আসলে যাচ্ছে কোথায় ওরা। কিন্তু ওর হুঁশিয়ারি মনে পড়তেই আর কিছু ই জিঙ্গেস করেনি। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এল। দুজনের‌ই ক্ষুদা লেগেছে। এতক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে পথ চলছিল বিক্রম। এবার মুখ খুললো‌।


: তোমার ক্ষুদা লাগেনি? আমার তো খুব ক্ষুধা লেগেছে। সন্ধ্যাও হয়ে গেছে। এখন  কি করবে।


অনেকটা হাঁফিয়ে হাঁফিয়ে কথাগুলো বললো বিক্রম।


: চিন্তা করো না, সামনেই নিরাপদ জায়গা আছে, খাওয়ার ব্যবস্থাও আমি করবো।


কিছুটা আশ্বস্ত হল বিক্রম।তার কথামত পথ চলতে লাগল।কিছু পথ পেরুতেই একটা মাঠ সামনে পড়লো।


: এখানে রাতটা কাটাতে হবে। তুমি এখানটায় বসো আমি দু একটা ফল নিয়ে আসছি তোমার জন্য।


বলেই সাঁই সাঁই করে উড়ে গেল হিরামন।


মাঠটা অনেক বড়ো। মাঠের একদিকে একটা পুকুর আছে। মাঠের মধ্যে ঘাসগুলো ছোট ছোট। বোঝাই যায় এখানে গরু অথবা হরিন ঘাস খেতে আসে নিয়মিত। গরুর বিষ্টা দেখতে পেল কাছেই। এবার নিশ্চিত হল এখানেই গরুই আসে ঘাস খেতে। হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ালো বিক্রম। পুকুরের পানি অনেক ঘোলা। হয়তো জঙ্গলের অধিকাংশ প্রানি এখানে পানি পান করে। পুকুর পাড়ে অনেক প্রানির পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। তবে বড় কোন প্রানির পায়ের ছাপ নেই এটা দেখে কিছুটা চিন্তামুক্ত হল বিক্রম। আরো ভালো করে মাঠটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল ও। সন্ধ্যা বেলা মৃদু হাওয়া শরীরে এসে পরল দিয়ে যাচ্ছে বারবার। শরীরের ক্লান্তি অনেকটা কেটে গেল।

এদিকে ছোট ছোট কিছু ফল নিয়ে হাজির হল হিরামন। দু পায়ে এবং ঠোঁটে বেশ কয়েকটা ফল আনা সম্ভব ওর কাছে।

এসে এক পসলা ঝাড়ি দিল বিক্রমকে। পুকুর পাড়ে তার যাওয়া একদম উচিত হয়নি।হতে পারতো পুকুরে কুমির থাকতে পারতো।মুখ বুজে সহ্য করে নিল বিক্রম হিরামনের কথাগুলো। খাবার খেয়ে নরম ঘাসের উপরেই শুয়ে পড়ল বিক্রম। হিরামন উড়ে গিয়ে কাছের একটা গাছে গিয়ে বসলো। সারাদিনের খাটনিতে ক্লান্ত শরীরটা যখন একটু বিশ্রাম পেল, সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো।


সকালের সূর্যটা মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল বিক্রমের। উঠে বসল। চমকে গেল বিক্রম।তার পাশেই অনেক ফল ফলাদি রাখা আছে। বুঝতে বাকি র‌ইল না এটা কার কাজ।

নাম ধরে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করার পর‌ও পাওয়া গেল না। কিছুক্ষণ পর কিছু ফল নিয়ে ফিরে এল পাখিটা।


: অনেক হয়েছে। আর না, আমি থাকতে তুমি এত কষ্ট কেন করতে গেলে।


ওর দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বলল। 


: এই জঙ্গলে আমার থেকে তোমার বিপদ অনেক। তাই তোমাকে খুব নিরাপদে থাকতে হবে।


: কিন্তু লোকালয় কেন যাচ্ছি না আমরা।

আর যেতেই বা কতদিন লাগবে


: তুমি আমার কথামত চলো,নিজেই সবকিছু বুঝতে পারবে।তবে একটা কথা বলি, তোমার আর জঙ্গল চিরে মেতে হবে না।এখানেই রাস্তা আছে। মানুষ চলাচলের রাস্তা আছে এখানে।


অনেকটা খুশি হলো বিক্রম।দুজন কিছু ফল খেয়ে নিল। শরীরের ক্লান্তি অনেকটা

কমে গেছে। খুব ফুরফুরে লাগছে মেজাজটা।হিরামনের দেখানো পথে চলতে লাগল বিক্রম। সুন্দর এই পরিবেশে ওদের খুব সুন্দর লাগছিল।

প্রায় অর্ধ প্রহর পর্যন্ত জঙ্গলের সরু পথ দিয়ে এগিয়ে চললো ওরা দুজন। 

সুর্যটা তখন মাথার ঠিক উপরে। ওরা এসে পৌঁছুল এমন একটা জায়গায় যেখানে অনেকগুলো সরুপথ একসাথে মিশেছে।

আমরা যাকে বলি চার বা পাঁচ রাস্তার মোড়। এখানে এসে থেমে গেল হিরামন। 


: থামলে কেন হিরামন?


অনেকটা জোরেই জিঙ্গেস করল বিক্রম।


: এখন যা করার তোমাকে ই করতে হবে ।খুঁজে বের করতে হবে অসুস্থ রাজপুত্রকে। রাজপুত্র এখানেই আসেপাশে কোথায় আছে।

: মানে (কন্ঠে ভয়ের ছাপ)

: আমি কিভাবে খুজব,আর রাজপুত্র এখানে এলে কি করে?


: শিকারে এসেছিল রাজকুমার।পথ হারিয়ে ফেলেছিল।তার সাথিরা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তোমাকে তাকে খুঁজে বের করতে হবে।


কিছুটা বুঝতে পারলো বিক্রম।তবে তাকে আগে কিছু খেয়ে নিতে হবে। সাথে সকালের আনা অনেক ফল অবশিষ্ট ছিল। সেই ফলগুলো দুজন মিলে খেতে লাগল।রেখে দিল অবশিষ্ট ফলের বিচি গুলো‌।

খাওয়া শেষ করে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে নিল। হিরামনকে আরো কিছু ফল আনতে বলে কাজে নেমে পড়ল বিক্রম।

একটা পথ দিয়ে হেঁটে যেতে লাগল, এবং চিহ্নসরুপ ঐ পথে ফলের বিচি ছিটিয়ে দিল। দু তিনটা পথ কিছুদূর গিয়ে ই শেষ হয়ে গেছে।এই পথে কিছুই পেল না বিক্রম। বাকি আছে এখন‌ও তিনটা পথ। কোন পথে যেতে পারে রাজকুমার। 


ও নিরবে বসে কিছুক্ষণ ভাবলো। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। রাজা বা রাজকুমার যখন চলে তখন তো গোড়া🏇

নিয়ে যাত্রা করে। ঘোড়া নিয়ে যদি যায় তাহলে অবশ্যই ঘোড়ার পায়ের ছাপ পথে থাকবে।

সে এবার খুব মনযোগ সহকারে সরুপথ গুলো পর্যবেক্ষন করতে লাগলো। হ্যাঁ ওর ধারনাই ঠিক। একটা পথে অনেক ঘোড়ার স্পষ্ট পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। বিক্রম সেই পথ দিয়েই এগুলো। কিন্তু কিছুদূর যেতে ই এই পথ‌ও শেষ হয়ে গেল। ওর মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল।এই পথে এসে ওরা গেল কোথায়।

ও মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে লাগলো। ভালো করে ঘোড়ার ছাপ লক্ষ করে আবার অনুসরন করল। সবগুলো ঘোড়া এই পথে আবার ফেরত এলেও একটা ঘোড়া জঙ্গলের ভিতর ঢুকে গেছে। হিরামনের‌ও কোন খোঁজ নেই।সেই যে গেল আর ফিরে আসেনি।

বিক্রম সাহস করে আবার জঙ্গলের ভেতর ঢুকতে লাগল ঘোড়ার পায়ের ছাপ অনুসরণ করে।এই পথে লতাপাতা একটু কম।তাই যেতে তেমন অসুবিধা হয়নি। কিছুদূর যেতেই ঘোড়ার হেৃষা ধ্বনি বিক্রমের কানে এল।তবে ওর ডাক শুনে স্পষ্ট বুঝা যায় ও কোন বিপদে পড়েছে। পায়ের ছাপ অনুসরণ করে এগিয়ে গেল বিক্রম। হ্যাঁ,গোড়াটা সামনে ছটফট করছে।পিছনে মাটিতে শুয়ে আছে রাজপুত্র।ঘোড়া টাকে ঘিরে ধরে আছে দু তিনটা সাপ🐍। ফনা তুলে আছে।বিক্রম দেরি করল না। একটা শক্ত লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সাপ গুলোর উপর। একে একে সবগুলো সাপটাকেই মেরে ফেলল ও।

ঘোড়াটা চিৎকার করা বন্ধ করে দিয়েছে।


বিক্রম তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেল রাজকুমারের কাছে। পোশাকে রাজকীয় ভাব থাকলেও মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। অনেকটা আধাকোলা করে রাজ কুমারকে নিয়ে এল বিক্রম।ঘোড়াটা ওর পিছনে পিছনে। রাজকুমার কে নিয়ে রাস্তাগুলোর মোড়ে চলে এল বিক্রম।হিরামন বসে আছে সেখানে।আছে অনেক সুস্বাদু ফল।

রাজকুমারের মাথা বিক্রমের কোলে নিয়ে মাটিতে শুইয়ে দিল বিক্রম।হুস আছে তবে শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত তাই কথা বলতে পারছে না। পানি খাবে বলে ইশারায় দেখিয়ে দিল রাজপুত্র।

ছোট বাচ্চাদের যেমন পানি খাওয়ায় সেভাবেই খাইয়ে দিল পানি রাজপুত্রকে।

এবার ফল খাইয়ে দিল ধীরে ধীরে। নিজেও খেয়ে নিল কিছু ফল। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রাজকুমার খাওয়ার একটু পরেই ঘুমিয়ে গেছে বিক্রমের কোলে।বিক্রম‌ও গাছের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। পাহারায় আছে হিরামন।


সকালটা যথারীতি পাখির কিচিরমিচির শব্দেই হল। ঘুম ভাঙল বিক্রমের। রাজকুমার এখনো শুয়ে আছে ওর কোলে মাথা রেখে।ওকে আর জাগাল না।


কিছুক্ষণ পর জেগে উঠল রাজকুমার। চোখ খুলে দেখতে পেল বিক্রমের হৃদয় কাড়া হাসি।সুর্যের লাল আভা পড়ে টকটকে লাল হয়ে গেছে ওর মুখ।

উঠে বসল রাজকুমার।

: তুমি মানুষ না ফেরেস্তা ,আর কিছুক্ষণ থাকলে আমি হয়তো মরেই যেতাম।


পাতলা একটা কন্ঠ। কথায় মাদুর্য আছে। রাজপরিবারের সদস্য তাই স্পষ্ট শুদ্ধ ভাষা।

বিক্রম ওর সবকথা রাজকুমার কে বলল।তবে হিরামন নিষেধ করেছিল তাই গুরুজি এবং এইসব সবকিছু গোপন করল।

: এখনি আমরা রাজ দরবারের উদ্দেশ্যে র‌ওনা হব।পিতামাতা সবাই খুব চিন্তা করছে আমার জন্য।


বিক্রম মাথা নেড়ে সায় দিল।ওরা চলল রাজমহলের উদ্দেশ্যে, সঙ্গে হিরামন।

যেতে যেতে সব শুনল বিক্রম।

একসাথেই এগুচ্ছিল সবার ঘোড়া। কিন্তু পথ নি চিনে ভুল পথে চলে গিয়েছিল ওরা।পথ শেষ দেখে সবাই ফিরে এলেও রাজকুমারের ঘোড়া প্রচন্ড গতিতে চলে যায় বনের ভিতর।কারন ওর পা পেঁচিয়ে রেখেছিল একটা সাপ।ঘোড়া সাপ খুব ভয় পায়,এটা সবাই যানে। কিছুদূর গিয়ে ঘোড়া রাজকুমারকে পিঠ থেকে ফেলে দেয়। ততক্ষণে আরো দুটো সাপ ওখানে চলে আসে। প্রায় তিন দিন,ঘোড়াটা রাজকুমার কে পাহারা দিয়েছে।


এদিকে সুন্দরগড় রাজ্যের রাজমহল আসেপাশে রাজ্যের তুলনায় অধিক জাঁকজমকপূর্ণ।হাতির দাঁতের সিংহাসনে অলংকৃত করে বসে রাজা সুবির সেন।মহলের সর্বত্র আলোক সজ্জায় সজ্জিত। হাজার হাজার দাস দাসি। সবকিছুতে ভরপুর এই রাজসভা।মন্ত্রী, উজির,রাজা,সবার মুখেই দুঃশ্চিন্তা 

: আজ তিন দিন বিগত হল রাজকুমারের কোন খবর নেই!!


হুংকার ছাড়লেন রাজা।পরিবেশটা আরো থমথমে হয়ে গেল। অন্দরমহলে বার বার বেহুঁশ হয়ে পড়ছে রানি ঊর্মিমালা।সার মনেই দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘ একদম অন্ধকার করে রেখেছে। হঠাৎ একজন সিপাহি অনেকটা দৌড়ে রাজ দরবারে প্রবেশ করল। হাঁপিয়ে উঠেছে,,,,


: রাজামশাই সিমান্ত থেকে খবর এসেছে, রাজকুমার সাথে এক বন্ধুকে নিয়ে রাজ দরবারের দিকে আসছে।


কথাটা শুনে রাজা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।

: ঠিক শুনেছ তো!!?


: হ্যাঁ রাজামশাই,, সাথে একটা সুন্দর পাখিও আছে।আর কিছুক্ষের মধ্যেই ওরা চলে আসবে।

রাজা হুকুম করলেন। নতুন অতিথি এবং রাজকুমার কে বরন করার ব্যবস্থা করো। কোনপ্রকার যেন ত্রুটি না হয়।